চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ নিয়ে মানুষের কৌতুহলের যেন শেষ নেই। আর কৌতুহল থাকবেই না কেনো, এ যে আসে বহু বর্ষ পর পর। চন্দ্রগ্রহণ কখন হবে, কেন হয় এর উত্তর অধিকাংশই আজ অজানা নয়। পৃথিবী পরিভ্রমণের অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য যখন ঠিক চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে চলে যায়, তখন হয় চন্দ্রগ্রহণ। সহজভাবে বলা যায়, যখন ঠিক তারা এক রেখায় অবস্থান করে, আর ঠিক এ সময় পৃথিবীর কোনো পৃষ্ঠের মানুষের কাছে চাঁদ অদৃশ্য হয়ে যাওয়াই চন্দ্রগ্রহণ।
চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবী সূর্যালোককে চন্দ্র পর্যন্ত যেতে কিছুটা বাঁধা সৃষ্টি করে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডল দ্বারা চন্দ্রের পৃষ্ঠ হতে একটি মাত্র প্রতিফলিত আলোকরশ্মি এবং সূর্যাস্ত কিংবা সূর্যোদয়ের জন্য চাঁদকে অনেকটা সময় লাল দেখায়। এজন্য অনেকে চন্দ্র গ্রহণের সময় চাঁদকে ‘Blood Moon’ বা ‘রক্তচাঁদ’ বলে অভিহিত করে থাকেন।

lunar eclipse (Blood Moon)
পৃথিবীর যে ছায়ার কারণে চন্দ্রগ্রহণ হয়, সে ছায়াকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে, যা হল, উম্বরা এবং কলম্বা। উম্বারা-র মধ্যে সরাসরি সৌর বিকিরণ সংঘটিত হতে পারে। চন্দ্রগ্রহণ পৃথিবীর সবাই একসাথে দেখতে পারে না। কেননা, পৃথিবীর কিছু জায়গায় এই চন্দ্রগ্রহণ দেখা যায়। চন্দ্রগ্রহণের সময়কাল কিছু ঘন্টা, যেখানে সূর্যগ্রহণের সময়কাল মাত্র কিছু মিনিট; যা চন্দ্রগ্রহণের চেয়ে নিতান্তই কম।
চন্দ্রগ্রহণ প্রতি শতকে প্রায় এক থেকে দুইশতবার পৃথিবীতে পর্যবেক্ষিত হয়। ১৯০০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৪২ বার চন্দ্রগ্রহণ হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছেন, একুশ শতাব্দীতে প্রায় ২৩০ থেকে ২৫০ বার পৃথিবী দেখতে পাবে চন্দ্রগ্রহণ। এর মধ্য ৫৮ বার আংশিক, ৮৭ বার পিনুম্ত্রাল, আর পুরোপুরি চন্দ্রগ্রহণ প্রায় ৮৫ বার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪৭ বার চন্দ্রগ্রহণ দেখেছে বিশ্ববাসী। এই ৪৭ বারের মাঝে ২০ বার পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষিত হয়েছে পৃথিবীতে। সর্বশেষ চন্দ্রগ্রহণ ছিল কিছুদিন আগেই। ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই আন্তর্জাতিক সময় ২০.২২ মিনিটে চন্দ্রগ্রহণ হয়। পরবর্তী চন্দ্রগ্রহণ আবার ২০১৯ সালে দেখা যাবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ, আন্তর্জাতিক সময় ৫.১২ ও ১৬-ই জুলাই ২১.৩১ মিনিটে দেখা যাবে চন্দ্রগ্রহণ। এ দুটো চন্দ্রগ্রহণই হবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। তারপর ২০২০ সালে চন্দ্রগ্রহণ হবে মোট চারবার; তবে কোনোবারই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একবিংশ শতাব্দীর শেষ পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণটি হবে, ২০৯৮ সালের ১০ অক্টোবর, আন্তর্জাতিক সময় ৯.১৬ মিনিটে। তবে একুশ শতকের দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণটি ছিল ২৭ জুলাই ২০১৮ এর চন্দ্রগ্রহণ। ১.১ মিনিট থেকে ২.৪৩ মিনিট পর্যন্ত সম্পূর্ণ চাঁদ ছিল পৃথিবীর ছায়ায়, চাঁদ পরিণত হয়েছিলো রক্তবর্ণে রঞ্জিত। এরপর ২১২৩ সালে হবে এর চেয়েও বড় চন্দ্রগ্রহণ।
চন্দ্রগ্রহণ এক অতিলৌকিক আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক ঘটনা। অনেক জাতি তাই চন্দ্রগ্রহণকে ভাগ্যের বিবেচক মনে করে এবং তা মানুষের ভবিৎষ্যত নির্ধারণ করে বলে তাদের ধারণা। এছাড়াও বিভিন্ন প্রাচীন পুরাণে-ও আছে চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে অনেক দেব-দেবীর উপাখ্যান। প্রাচীনকালে অনেকে রক্তবর্ণের চাঁদকে অসুস্থতার প্রতীক বলেও ধারণ্ করতো। আবার শুভ-অশুভের প্রতীক হিসেবে চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে রয়েছে এখনও দ্বিধা-দ্বন্দ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে চন্দ্রগ্রহণ থেকে কিছু বাড়তি সুবিধা নিতে চায় বিজ্ঞানীরা।