আপনাকে যদি কেউ বলে পৃথিবীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কোনটি? তাহলে উওরে বলতে পারেন যে পৃথিবীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল -১৩৩.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস মানে কেলভিন স্কেলে ১৩৯.৪ ডিগ্রী কেলভিন, এই তাপমাত্রা এন্টার্কটিকাতে রেকর্ড করা হয়েছিল। আবার অন্য দিকে “Boomerang” নেবুলা সবার থেকে আলাদা কেননা ধরে নেওয়া হয় যে এটিই মহাকাশের সবচেয়ে শীতলতম জায়গা। এর তাপমাত্রা – ৪৫৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট মানে কেলভিন স্কেলে ১ কেলভিন। কিন্ত এখন সময় এসেছে এই ধারনাকে বদলে দেওয়ার, কেননা বিজ্ঞানীরা এখন শূন্য কেলভিন এর কাছাকাছি তাপমাএা তৈরি করেছেন BECs বা Bose Einstein Condensate তৈরি করার মাধ্যমে এবং ধরা হয় এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

চিত্রঃ Boomerang নেবুলা
নাসার CAL (Cold Atom Laboratory) প্রথম বারের মত এমন এক ধরনের পরমাণু মেঘ তৈরি করা হয় যাকে আমরা BECs (Bose Einstein Condensate) বলে জানি। এটি ৭১ বছর আগে বোস এবং আইনস্টাইন ভবিষ্যৎ বাণী করেন |
CAL (Cold Atom Laboratory) মূলত একটি যন্ত্র। এটা এমন ভাবে ডিজাইন করা হয় যেন বিজ্ঞানীররা ISS (international Space Stations) এর ক্ষুদ্র মহাকর্ষীয় বলের পরিবেশে অতি শীতল পর্দাথের উপর যেন গবেষণা চালাতে পারে। এই যন্ত্রটি ২০১৮ সালের মে মাসে ISS এ স্থাপন করা হয়। ISS এই প্রথম বারের মত BECs তৈরি করা হয়।

NASA’s Cold Atom Laboratory
এখন প্রশ্ন হল BECs বলতে আসলেই আমরা কি বুঝি?
BECs হল অনেক গুলো পরমাণু সমষ্টি এর তাপমাত্রা সাধারণত পরম তাপমাত্রার কাছাকাছি থাকে এবং এদের ঘনত্ব অনেক কম হয়। তাত্ত্বিকভাবে এই তাপমাত্রায় যে কোন পর্দাথের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। কেননা এসময় পরমাণু গুলোর শক্তি থাকেনা বললেই চলে এবং এরা একসাথে জমাট বাঁধতে থাকে। আর সবগুলো পরমাণুর শক্তি অবস্থা একই হয় ফলে পরমাণু গুলোকে মিলিতভাবে মনে হয় তারা যেন একটি পরমাণু।
BECs কে পর্দাথের একটি অবস্থা বলা হয় কেননা এটা অন্য সকল যেমন তরল, কঠিন, গ্যাস এবং প্লাজমা থেকে আলাদা। BECs এ পর্দাথ তরঙ্গর মত আচারন করে। আর আমরা জানি যে তরঙ্গ গুলো অতি ক্ষুদ্র স্কেলে হয়। এসময় সব পরমাণুর তরঙ্গ গুলো একই রকম হয় তাই পরমাণু গুলোকে আলাদা করা যায় না।
আমি আগেও বলেছি BECs অনেকগুলো পরমাণুর সমষ্টি এবং এই পরমাণু গুলো একক পরমাণুর মত আচারন করে তাই একে “Super Atom” বলা হয়। এজন্য এর উপর গবেষণা চালানো অনেক বেশি সহজ। CAL এর বিজ্ঞানীগণ BECs প্রযোগ করার জন্য রুবিডিয়াম কে বেছে নিয়েছেন তাদের মত অনুসারে এই ধাতু কে পরম তাপমাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং মহাবিশ্বে এটা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
১৯৯৫ সালে প্রথম BECs তৈরি করে “Eric Cornell, Carl Wieman, Wolfgang Ketterle”। এই মহাপুরুষরা রুবিডিয়াম গ্যাস কে ১.৭*১০^-৭ কেলভিন তাপমাত্রায় ঠান্ডা করেন অর্থাৎ যা প্রায় দুই কেলভিনের ১ কোটি ভাগের এক অংশ মাত্র!! তাদের এই অবদানের জন্য ২০০১ সালে পর্দাথ বিজ্ঞানে তারা নোবেলজয়ী হন। তখন থেকে প্রায় ১০০ এর ও বেশী গবেষনা BECs এর উপর চালানো হয় এবং এর মধ্যে কিছু মহাকাশে করা হয়।

Bose Einstein Condensate
উপরের ছবিটি হল রুবিডিয়াম এর উপর যখন BECs প্রযোগ করা হয় এখানে আমার কিছু চূড়া দেখতে পাচ্ছি, যখন তাপমাত্রা শূন্য কেলভিলের কাছাকাছি থাকে এবং পরমাণুরর বেগ শূন্য হয় এটা তখন গঠিত হয়। এসময় সব পরমাণু মিলে বিরাট এক তরঙ্গ তৈরি করে।
কিভাবে BECs করা হয়ঃ
CAL এ এক ধরনের আর্দশ পাত্র আছে যার নাম “Quad Locker”। এর মধ্যে পরমাণুর মেঘ তৈরি করা হয়। এটাকে “Atom Traps ” বলা হয়। এই পাত্রের মধ্যে প্রথমে রুবিডিয়াম গ্যাস কে প্রবেশ করানো হয় এবং এর উপর লেজার প্রযোগ করা হয়, যার ফলে পরমাণু গুলোর শক্তি কমে যায়। এরা ঠান্ডা হতে থাকে এবং এদের বেগ ও শূন্য হয়ে যায়। কিন্তু পৃথিবীতে যখন এই Atom Traps এর প্রভাব বন্ধ হয়ে যাই তখন এর উপর আবার মহাকর্ষ বল কাজ করে, যার ফলে গবেষনা চালানো কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু ISS এর ক্ষুদ্র মহাকর্ষ বলে গবেষনা চলানো অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়।

Shown here, the “Physics Package” inside NASA’s Cold Atom Lab, where ultracold clouds of atoms called Bose-Einstein condensates are produced.
বর্তমানে CAL এর বিজ্ঞানীরা রুবিডিয়ামের পরিবর্তে পটাশিয়ামের দুটি আইসোটোপ নিয়ে কাজ করা শুরু করেছেন।
এই গবেষণা যদি আমরা ভালো ভাবে করতে পারি তাহলে আমরা একসময় এই মহাবিশ্বের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পাওয়া যাবে। কোন ছোট বস্তুর উপর মহাকর্ষ কিভাবে কাজ করে তা জানা যাবে আর আমাদের এই মহাবিশ্ব কিভাবে কাজ করে তা জানার দৌড়ে অনেকদূর এগিয়ে যাব। তাছাড়া অতিশীতল তাপমাত্রায় পর্দাথ বিজ্ঞানে মূল সূত্রগুলো কিভাবে কাজ করবে তাও জানা যাবে এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রভাব জানা যাবে। সুতরাং এগিয়ে যাও CAL এর বিজ্ঞানীরা।