এই তো সেদিন খবরে আসলো আমাদের ঢাকা পৃথিবীর বসবাস অযোগ্য শহরের মধ্যে দ্বিতীয়। শুধু কি এই শহর? মানুষের জন্মলগ্ন হতে ঠাঁই নেওয়া এই গ্রহটিকে আমরা বেঁচে থাকার অযোগ্য করে তুলছি দিনকে দিন। তাই তো বেশ কিছু বছর ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয় বিশাল এ মহাবিশ্বে ক্ষুদ্র মানুষের জন্য একটা ঠাঁই খোঁজা। এজন্য চলছে বসবাসযোগ্য পরিবেশ সম্পন্ন একটি গ্রহের খোঁজ!
পৃথিবী বাসযোগ্য হওয়ার পেছনের মৌলিক বিষয়টি হলো ‘প্লেট টেকটোনিক্স’। পৃথিবীর আগ্নেয়গিরি বায়ুমণ্ডলে গ্যাস নির্গত করে। পরবর্তীতে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ভূগর্ভস্থ শিলা ও পললভূমিতে সিক্ত হয়ে যায়। এই দুই প্রক্রিয়ার ভারসাম্য বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণের একটা নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় রাখে, যেটি জীবনধারণের উপযোগী পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর বেশিরভাগ আগ্নেয়গিরি টেকটোনিক প্লেটের সীমারেখায় পাওয়া যায় যা কোন গ্রহের বসবাস উপযোগী হওয়ার অন্যতম একটি কারণ বলে বিজ্ঞানীরা বিবেচনা করেন।
টেকটোনিক প্লেটবিহীন গ্রহগুলোর উপর একটি বড় দৈর্ঘ্যের স্ফুলিঙ্গ প্লেট থাকে। এ ধরনের গ্রহগুলোর সংখ্যা ব্যাপক। বস্তুত শুধুমাত্র পৃথিবীতেই টেকটোনিক প্লেটের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেছে।

শিল্পীর চোখে বসবাসযোগ্য গ্রহ; উৎসঃ www.sci-news.com
সম্প্রতি গ্রহের জীবনচক্র সংক্রান্ত একটা গবেষণা হয়েছে। গবেষণায় দেখা হয়েছিলো, একটা গ্রহ গঠণের সময় এটি কী পরিমাণ তাপ ধরে রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা যায় যে, প্লেট টেকটোনিকবিহীন গ্রহগুলো তাদের আকার ও রাসায়নিক গঠনের উপর ভিত্তি করে কয়েক বিলিয়ন বছর পর্যন্ত পানি সংরক্ষণ করে রাখতে পারে, এবং এভাবে এরা চার বিলিয়ন বছর পর্যন্ত জীবন ধারণের উপযোগী থাকতে পারে। তবুও গ্রহগুলো পৃথিবীর মত বসবাস উপযোগী হবে না কারণ সেখানে অগ্নুৎপাতের আগ্নেয়ক্রিয়া ও চক্র নেই। অগ্নুৎপাতের ফলে যে লাভা নির্গমন হয় তা সময়ের সাথে সাথে পিষ্টক স্তর হিসেবে জমতে থাকে। উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপে কার্বন-ডাই-অক্সাইড পাথর থেকে নির্গত হয়ে ভূপৃষ্ঠে জমা হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডি-গ্যাসিং। গ্রহের তাপউৎপাদী উপাদানের প্রকৃতি ও পরিমাণের উপর নির্ভর করে এই ডি-গ্যাসিং প্রক্রিয়াটি বৃদ্ধি পায়। শীতল হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একটি গ্রহকে নির্দিষ্ট পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করতে হয়। গবেষণাটি হতে প্রতীয়মান যে, একটি গ্রহ জীবনধারণের উপযোগী হতে হলে তাপউৎপাদী উপাদানের অস্তিত্ব ও পরিমাণ খুব জরুরী।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে এর আকৃতি। গ্রহ জন্মের সময়কার গঠন গ্রহের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয়। এটি খুব আশার বিষয় যে, একটি গ্রহের বসবাসযোগ্য হওয়ার জন্য প্লেট টেকটোনিক থাকাটা জরুরী নয়। হয়তোবা নিকট ভবিষ্যতে আমাদের উপযোগী কোন গ্রহ পাওয়া সম্ভব হতেও পারে!