বৃহস্পতি কি? উত্তর আমরা সবাই জানি। এটি একটি গ্রহ। আচ্ছা এবার বলুন তো, বৃহস্পতি গ্রহে উপগ্রহের সংখ্যা কত? মানুষ স্বভাবতই কৌতূহলী। বৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর মতো প্রতিটি মানুষেরও রয়েছে কৌতূহলের ক্ষেত্রে ভিন্নতা। অজানাকে জানার, রহস্যকে ভেদ করার অদম্য স্পৃহা। আমার আজও মনে পড়ে ছোটোবেলার রাতের আকাশে নক্ষত্র গণনা, নক্ষত্রের সাথে দৌড় প্রতিযোগিতার স্মৃতিগুলো। আমি প্রায়ই আকাশের দিকে তাকিয়ে এর অন্তর্নিহিত রহস্যের ব্যাপারে জানতে চাইতাম। কিভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এ নীল আকাশ, কোন প্রকার ভিত্তি ছাড়াই। কী দিয়ে তা গঠিত, এর উপরেই বা কী বিদ্যমান কিংবা রাতের আকাশে তারাগুলো কেন হঠাৎ ছুটতে দেখা যায়? এই অজানাকে জানতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জগতে আামার বিচরণ, ভালবাসা। অতঃপর লেখালেখি ও সামান্য যা জানছি, শিখছি তোমাদের মতো জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রেমীদের কাছে তা কলমের ভাষায় তুলে ধরছি ৷ ওহ! কী লিখতে বসে কী সব আজেবাজে লিখছি৷ যাই হোক, এতক্ষণে তোমরা নিশ্চয়ই উত্তরটা মনে-মনে ৬৮ ঠিক করেছো । কিন্তু না, সঠিক উত্তর হচ্ছে ৭৯। এটা সম্প্রতি এক গবেষণার ফলাফল। আর এ গবেষণার খুঁটিনাটি নিয়ে আজকের লেখাটি সাজানো।
সম্প্রতি বৃহস্পতির কক্ষপথে বারোটি নতুন উপগ্রহ দেখা যায়। যার এগারটি হচ্ছে সাধারণ বাইরের উপগ্রহ এবং অবশিষ্ট একটিকে ‘ওডবল’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। ফলে, বর্তমানে বৃহস্পতির উপগ্রহের সংখ্যা দাঁড়াল ৭ঌ, যা সৌরমন্ডলের গ্রহগুলোর মধ্যে উপগ্রহের সংখ্যাগত দিক থেকে সব্বোর্চ্চ।
বসন্তকাল, ২০১৭-এ ‘কার্নেগী স্কট এস শেপার্ড’ এর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি দল উপগ্রহগুলো প্রথম চিন্হিত করে, যখন তারা সৌরমন্ডলের বহুদূরের বস্তুগুলো পর্যবেক্ষণ করছিলেন; প্লুটোর সুদূরে সম্ভাব্য শক্তিশালী একটি গ্রহের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে। শেপার্ড বলেন, “যখন আমরা সৌরমন্ডলের প্রত্যন্তে গ্রহের অনুসন্ধানের জন্য এর অত্যন্ত দূরবর্তী বস্তগুলো পর্যবেক্ষণ করছিলাম, তখন আমাদের পর্যবেক্ষণস্থলের নিকটে বৃহস্পতি গ্রহে হঠাৎ কিছু ঘটনা ঘটে। ফলশ্রুতিতে, গ্রহটির চতুর্দিকে নতুন অনেকগুলো উপগ্রহের দেখা পাওয়া যায় লাভজনকভাবে।” উইলিয়ামস আরও বলেন, “আমাদেরকে এক বছর ধরে বিভিন্নসংখ্যক পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছিল বৃহস্পতি গ্রহের পরিমন্ডলে প্রকৃতপক্ষে উপগ্রহগুলোর পরিভ্রমণের নিশ্য়চয়তা যাচাইয়ের জন্য।”
‘ইন্টারন্যাশনাল এস্ট্রোনোমিকাল ইউনিয়নস মাইনর প্লানেট’ সেন্টারে গ্যারেথ উইলিয়ামস দলটির পর্যবেক্ষণকৃত তথ্য নীরিক্ষা করে নতুন উপগ্রহগুলোর জন্য কক্ষপথ নির্ণয় করেন। নতুন উপগ্রহলোর মধ্যে নয়টির কক্ষপথ রেটরোগ্রেইড অথাৎ বৃহস্পতির ঘূর্ণণের বিপরীত দিকে আবর্তিত হচ্ছে৷ দূরবর্তী রেটরোগ্রেইড-এ উপগ্রহগুলোকে কক্ষপথ সংক্রান্ত নূন্যতম তিনটি স্বতন্ত্র্য দলে ভাগ করা যায় এবং ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো একটি বৃহৎ মাতৃদেহের তিনটি অবশিষ্টাংশ, যা এসটেরিয়ডস, কমেটস অথবা অন্যান্য উপগ্রহের সাথে সংঘর্ষকালে বিভক্ত হয়েছে বিভিন্ন অংশে। এছাড়া, নতুন আবিষ্কৃত এ উপগ্রহগুলোর বৃহস্পতিকে একবার সম্পূণরূপে আবর্তন করতে প্রায় দুই বছর সময় লাগে।
অবশিষ্ট দুটি উপগ্রহ বৃহস্পতির নিকটে অবস্থিত অভ্যন্তরীণ উপগ্রহমন্ডল এর একটি অংশ, যাদের কক্ষপথ প্রোগ্রেইড অথাৎ গ্রহের ঘূর্ণণের বিপরীত দিকে আবর্তিত হচ্ছে। প্রোগ্রেইড উপগ্রহদ্বয় বৃহস্পতির চারপাশে একই কাক্ষিক দূরত্ব ও নতিকোণে আবর্তিত হওয়ার কারণে এগুলোকে একটি বৃহৎ উপগ্রহের ভাঙ্গনের পরে এর বিভিন্ন খন্ড থেকে সৃষ্টি হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। এছাড়া, নতুন আবিষ্কৃত উপগ্রহ দুটির এক বছরের থেকে সামান্য কম সময় লাগে বৃহস্পতিকে একবার সম্পূর্ণরূপে আবর্তনের জন্য।
“আমাদের আরেকটি আবিষ্কার হল একটি প্রকৃত ওডবল, যার কক্ষপথের গঠন বৃহস্পতিগ্রহে বিদ্যমান অন্যান্য উপগ্রহসমূহ থেকে ভিন্ন। এটি বৃহস্পতির জ্ঞাত উপগ্রহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে ছোট, এক কি.মি. এর কম ব্যাসাধ”, শেপার্ড বর্ণনা করেন।
ওডবল উপগ্রহটি বৃহস্পতিকে একবার সম্পূর্ণরূপে আবর্তন করতে প্রায় দেড় বছর সময় লাগে, এবং এটি প্রোগ্রেইড উপগ্রহসমূহ বৃহস্পতি থেকে যে দূরত্বে অবস্থিত তার চেয়েও অধিক আনত ও অধিক দূরত্বে অবস্থিত৷ তাই, প্রোগ্রেইড উপগ্রহগুলোর মত নতুন প্রোগ্রেইড ওডবল উপগ্রহটিও বৃহস্পতির বাইরের দিকে বিদ্যমান রেটরোগ্রেইড উপগ্রহগুলোকে আড়াআাড়ি কক্ষপথে আবর্তন করে ৷ প্রোগ্রেইড ওডবল ও রেটরোগ্রেইড উপগ্রহগুলো পরস্পরের বিপরীত দিকে আবর্তিত হওয়ার ফলে তাদের মধ্যে সম্ভাব্য মুখোমুখিভাবে সংঘর্ষ হয় অনেক বেশী পরিমাণে।
“এটি একটি অস্থিতিশীল অবস্থা। তাই মুখোমুখি সংঘর্ষের কারণে খুব দ্রুত উপগ্রহসমূহ বিভিন্ন অংশে বিভক্ত এবং ধূলিকণায় পরিণত হয়”, শেপার্ড আরও বলেন।
তাছাড়া বর্তমানে আমরা উপগ্রহের কক্ষপথ সংক্রান্ত যেসব বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ দেখতে পাই হতে, পারে তা দূর অতিতে অস্তিত্বলাভ করেছে একই কলাকৌশলের মাধ্যমে৷ তারা আরও অনুমান করেছেন, ওডবল উপগ্রহটি প্রোগ্রেইড কক্ষপথবিশিষ্ট একটি বৃহৎ উপগ্রহের সবশেষ অবশিষ্টাংশ, যা গঠিত হয়েছে কতিপয় রেটরোগ্রেইড উপগ্রহসমূহের মুখোমুখি সংঘর্ষকালে। আর উপগ্রহটির জন্য ‘বেলিটুডো’ নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ৷
পরিশেষে, গবেষণার একটি সম্ভাবনাময় দিকের উল্লেখ না করে পারা যায় না। জটিল এ ঘটনার প্রভাবে নতুন একটি উপগ্রহের কক্ষপথ গঠন ও ঘটনাটির যথাযথ বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা খুব সহজে সৌরমন্ডলের শুরুর দিকের ইতিহাস জানতে পারবেন ৷
SOURCE : www.sciencedaily.com/releases/2018/07/180717101256.htm