আওসাফ জারিফ সিদ্দিকি
মহাকাশ নিয়ে মানুষের আগ্রহের অভাব নেই। তাই মনে প্রায়ই প্রশ্ন আসে মানব ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্তপুর্ণ মহাকাশযান বিষয়ক প্রকল্প কোনটি? যারা হয়তবা মহাকাশযান নিয়ে খোজখবর রাখে তারা সবাই একমত হবে যে তা হল ভয়েজার প্রোজেক্ট।
“ভয়েজার টুইন্স” নামটা হয়তবা তাদের অনেকেরই শুনা। আসলে এরা হল ভয়েজার প্রজেক্ট এর অংশ ২টি মহাকাশযান। ১৯৭৭ সালে মহাকাশ গবেষনাকে নতুন মাত্রা প্রদানের লক্ষে মহাকাশযান গুলো উৎক্ষেপন করা হয়। আজ পর্যন্ত ৪০ বছরের এই ভ্রমনকালে তারা আবিষ্কার করেছে শনি, ইউরেনাস,নেপচুন ও জুপিটার। তারা পাঠিয়েছে এই গ্রহগুলোর অদ্ভুত সব দৃশ্য – আগ্নেয়গিরির ব্যাপকতা, গ্যাসলিন ধোঁয়ার প্রভাব ইত্যাদি।
বড় বোন তথা ভয়েজার-১ ২০১৩ সালেই সৌরজগৎ অতিক্রম করে ও ১৮ আগস্ট, ২০১৭ পর্যন্ত তা পৃথিবী হতে ২০ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।অপরদিকে ভয়েজার-২ তুলনামূলক কম তবে ১৭ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল এবং ৪র্থ মহাকাশযান হিসেবে সৌরজগৎ অতিক্রম করার মতো গতিবেগ অর্জন করেছে। এই দূরত্ব এতই বেশি যে এদের পাঠানো সংকেত সংগ্রহে প্রয়োজন নাসার Deep Space Network। এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। এই সিস্টেম এর অন্তর্গত অনেকগুলো বিশালদেহি সেটেলাইট অ্যান্টেনা ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর নানা জায়গায়।
এত অভিনব যন্ত্রপাতির সাথে সম্পৃক্ততা থাকার পরও মহাকাশযান গুলোতে কিছুক্ষেত্রে রয়েছে সরলতা। এনরিক মেডিনা(মিশন কন্ট্রলার) বলেছেন,” ভয়েজার-২ এ স্থাপিত ট্রান্সমিটার এর ক্ষমতা মাত্র ১২ ওয়াট হতে সর্বোচ্চ ২০ ওয়াট যা আমাদের বাসার সাধারন রেফ্রিজারেটর এর ক্ষমতার সমান।“
এবার আসা যাক ভয়েজার কীর্তির কথায়। উত্তরনের প্রায় ১৮ মাস পর ১৯৭৯ তে জুপিটারের কাছাকাছি এসেই এরা জানাতে শুরু করে এই গ্রহের অজানা সব খবর। মানুষ আগে ভাবত পৃথিবী তেই কেবল আগ্নেয়গিরির প্রভাব ও জলরাশিরর অস্তিত্ব আছে। তবে ভয়েজার প্রদত্ত ছবিতে জুপিটার এর চাঁদ ইউরোপার ভুতকের গঠন দেখে বিজ্ঞানিরা মতামত দেন যে এখানে আগে জলরাশি ছিল। মজার ব্যাপার জুপিটার এরও আমাদের চাঁদের সমান এমন একটি চাঁদ আছে যাতে আগ্নেয়গিরিরর উদগিরনের পরিমান পৃথিবীর প্রায় ১০গুন। ভয়েজারই প্রথম শনির উপগ্রহ টাইটান এর আবিষ্কার করে। গ্লিস-৪৪৫ তারাটির দূরত্ব পৃথিবী থেকে ১৭.৬ আলোকবর্ষ এবং ধারনা করা হয় আগামী ৪০০০০ বছরে ভয়েজার-১ সূর্যের তুলনায় তারাটির অধিকতর কাছে অবস্থান করবে।
অবাক করার মতো হলেও ভয়েজার-২ ৪০০০০মাইল/ঘণ্টা বেগে চলমান থাকলে তা পৃথিবী হতে উজ্জ্বলতম তারা সিরিয়াস এ পৌছাবে। আরেকটি আগ্রহপূর্ণ ব্যাপার হল মহাকাশযানগুলতে ছিল এলিয়েনদের সামনে মানবজাতিকে তুলে ধরার পদক্ষেপ। বিজ্ঞানীরা এতে রেখেছিল বিভিন্ন ভাষায় সাধুবাদ, নানা প্রাণির আওয়াজ এর রেকর্ড। তাদের ধারনা ছিল যদি কখনো মহাকাশযান ২টির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তারপর যদি তারা কোন গ্রহ কিংবা মহাকাশের কোন বস্তু দারা বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং যদি তাতে এলিয়েন এর অস্তিত্ব থাকে তবে তারা মানব্জাতি সম্পর্কে ধারনা পাবে। যদিও এলিয়েন এর অস্তিত্ব নিয়ে এখনো কোন প্রমান পাওয়া যায়নি।
এতসব কিছুর পরও রয়েছে দুঃসংবাদ। যে নিওক্লিয়ার ব্যাটারি দ্বারা মহাকাশযান ২টি চালিত তাতে প্রতিবছর ৪ ওয়াট কম তাপ উৎপন্ন হচ্ছে। ফলে ভয়েজার প্রোগ্রাম মেনেজার সুজি ডড এর মতে আগামি ১০ বছরে ভয়েজার-১এর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তখন হয়তবা নাসার বৃহৎ এন্ট্যানাগুলো তাদের সংকেতের অপেক্ষায় থাকলেও তা আর ফিরে আসবে না
Source:
- http://www.bbc.com/future/story/20170818-voyager-inside-the-worlds-greatest-space-mission
- https://www.express.co.uk/news/world/567957/NASA-s-Voyager-2-sets-course-for-star-Sirius-by-time-it-arrives-human-race-will-be-dead/amp)
- Gliese 445 – Wikipedia
আওসাফ জারিফ সিদ্দিকি
প্রতিষ্ঠান – চট্রগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
ফেসবুক আইডি –http://facbook.com/jarifsiddiquee